মাঘের প্রথম সপ্তাহ। বাইরে প্রচন্ড শীত। সঙ্গে হারকাঁপানো ঠান্ডা। অনেকটা কুয়াশাচ্ছন্ন আশপাশ। আবছা লাগছে কাছের পৃথিবীটাও। চোখের সীমায় কুয়াশাভরা ধবধবে মঞ্চ। যেন তুষারে ঢাকা গাঁ। রাতভর শিশিরের টুপটাপ ছন্দ, টিনের চাল বেয়ে নেমে আসা শিশিরের ফোঁটা এক অনিমেষ সৌন্দর্যের সৃষ্টি যেন। রাস্তার ধারে ফুটে থাকা নাম না জানা ফুলের পাপড়ির ভেতর কী এক রূপের ছোঁয়া! আল্পনা এক মুগ্ধতার। যেন সারারাত ধরে শিশিরের সঙ্গে করেছে মাখামাখি। ক্লান্ত মনে তাই এখন জড়োসড়ো। প্রকৃতিজুড়ে দারুন এক ছন্দ তুলেছে শীত। যেন কল্পনার এক ধূয়াশা, স্বপ্নময় কোনো রাতের অভিনব খেলা। যেখানে কোন ডানায় ভর করে ঘুরে বেড়িয়েছি। সুনীল আকাশে, বিজন প্রান্তরে কিংবা গোধূলি বিকেলে বেপরোয়া বনে পথে পথে ফিরেছি।
খুব মনে পড়ছে আজ হারিয়ে যাওয়া সেই হারানো দিনের কথা। সরিষা ক্ষেতের আল ধরে বহু দূর পথ চলা, সূর্যমুখীর বনে লুকোচুরি খেলা, রস-চিতই পিঠা নিয়ে কাড়াকাড়ি, ভোরের নরম রোদে মাদুর পেতে বই পড়া- আজ কেবল স্মৃতি। এ যেন আমার জীবন কাব্যের দেয়ালে টাঙানো ছবির মত মায়াময় অনাদরে পড়ে থাকা এক সৌন্দর্য। দিবানিশি খুঁজে ফিরি অতীতের সেই নস্টালজিয়া মুহূর্ত, পলক; খুঁজে অন্তরে, অনুভবে-হিম কুয়াশায় শিশিরফোঁটায় কিংবা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে থাকা শীত ফুলের পাপড়িতে। কিন্তু অতীত তো অতীতই। বাস্তবতা থেকে শতক্রোশ দূরের কোন ফ্রেম। যা ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। তবে অনুভব করা যায় সেই অধরা কে। প্রতিবছরই শীত আসে। যায় এসে যায়।
শীতের আমেজে তবু মন চায় খুব শৈশবে হারিয়ে যেতে, হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় মায়ের কোলে মুখ গুঁজে থাকতে কিংবা ঘাসের ডগা থেকে শিশির ফোঁটা তুলে ঠোঁটে মেখে দিতে, বাবার মাংসল হাতে হাত রেখে এলোমেলো পায়ে বহুদূর পথ চলতে, লাল হলুদে ফুল বিথীকায় হারিয়ে যেতে। কিন্তু না, আর আসবে না সেই অতীত। রোজ সূর্য এসে জানালায় দাঁড়িয়ে দিবসের ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু শৈশবের সেই দৌড়ঝাঁপ করা বিকেল আর আসে না। অন্তর সিক্ত করে না আর এই ভোরের শিশির। মুগ্ধ করে না আর এই ফুলের গন্ধ।
ভোরের পাখির মধুর কন্ঠ আজ কেন যেন বড় বিষাদ লাগে। খানিকটা পরেই হয়তো কুয়াশার চাদর ফেঁড়ে উঁকি দিবে সোনালী আভা। শিশিরের ফোঁটাগুলি নরম আলোতে চকচক করে এক নৈস্বর্গ সৃষ্টি করবে। কিন্তু আমার হৃদয়-অলিন্দে পড়ে থাকবে কেবল সেই অধরা শৈশব।
যুবায়ের আহমাদ
ইমাম ও খতিব পিরোজপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পিরোজপুর।
Leave a Reply