উইমেন ডেস্ক: কুষ্টিয়ায় নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের মহোৎসব চলছে। শহরতলীর কুমারগাড়া এলাকায় প্রভাবশালী একটি চক্র গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের দুই পাড়ের ছয় শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছ কেটে ফেলেছে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন চললেও যেন দেখার কেউ নেই।
এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (জিকে) কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করার এক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুমারগাড়া বিসিকের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জিকে সেচ খালের দুই পাড়ের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার ছয় শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছ বেশ কিছুদিন ধরে নির্বিচারে কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র। দ্রুত গাছ কাটতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইলেকট্রিক করাত। বৃক্ষনিধনের এ মহোৎসবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ সম্প্রসারণ বিভাগের এক কর্মকর্তা ও স্থানীয় ২০ নম্বর পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
কুমারগাড়া খালপাড়া এলাকার বাসিন্দা তরিকুল জানান, প্রায় মাসখানেক ধরে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় খালপাড়ের গাছ কেটে ট্রলি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু যারা এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কালভার্ট থেকে শুরু করে পূর্বদিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত দুই পাশ দিয়ে কমপক্ষে ৬০০-৭০০ গাছ ছিল। ইলেকট্রিক করাতের সাহায্যে দ্রুত গাছগুলো কেটে ট্রলি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর এজাজুল হাকিম, খালের সেচ কমিটির সভাপতি বড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক এবং পাউবো কুষ্টিয়ার সহকারী সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে নির্বিচারে এ বৃক্ষনিধনের মহোৎসব চলছে।
তবে পাউবো কুষ্টিয়ার সহকারী সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফজাল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেণ। তিনি দাবি করেন, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ নিজ বাড়ির সামনের গাছ কেটে নিয়েছেন। তিনি এ গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত নন।
কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এজাজুল হাকিম বলেন, এইটার দায়িত্ব আমার না, এইটার সমিতি আছে। কে গাছ লাগাইছে, কে কাটছে, এইসব বিষয় আমি জানি না।
খালের সেচ কমিটির সভাপতি আব্দুল খালেক দাবি করেন, এ গাছ কাটার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। তারাই ভালো বলতে পারবে এর সঙ্গে কারা জড়িত।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সামাজিক বনায়ন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি এম মোহাম্মদ কবির বলেন, পরিবেশ ও জীবন বাঁচাতে বনায়ন ও বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাউবো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, স্থানীয় একটি চক্র সেচ খালের উভয় পাড় থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটেছে বলে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বটতৈল ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক ও সেলিম হোসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনের নামে আইনি ব্যবস্থা নিতে গত ৬ আগস্ট কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তবে মডেল থানাপুলিশ এখনো মামলা রেকর্ড করেনি বলে শুনেছি।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৈয়দ আশিকুর রহমান জানান, জিকে সেচ খালের পাড় থেকে সরকারি গাছ চুরির লিখিত অভিযোগটি ওসি (অপারেশন) পরিদর্শক দীপেন্দ্র নাথ সিংহ তদন্ত করছেন। উনি মামলার সাক্ষ্য দিতে কয়েকদিনের জন্য স্টেশনের বাইরে থাকবেন। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা রেকর্ড বা গাছ চুরির অভিযোগে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
Leave a Reply