উইমেন ডেস্ক : কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ফুলতলা গড়াই নদীর চর থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে পকেট ভারি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা।
প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও বলেছে। তবুও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন চলছেই। এই বিষয় নিয়ে হরিপুরের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের গড়াই নদী সংলগ্ন ফুলতলা চর থেকে দীর্ঘদিন ধরে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এই বালি উত্তোলন করা হচ্ছে স্থানীয় নেতাদের যোগসাজসে। প্রতিদিন ২০০-৩০০ ট্রলি বালি কুষ্টিয়ার বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার অন্যসব জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ করা গেলেও হরিপুরে বালুমহল বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন।
বালি বহনকারী ট্রলির কারণে হাটশ হরিপুরের প্রায় রাস্তাতেই খানাখন্দনের চিত্র দেখা গেছে। অবৈধ বালি উত্তোলনের ট্রলির কারণেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে দাড়িয়েছে এসব রাস্তাগুলো। রাস্তার উপর বালির স্তপে পরিণত হয়েছে। বালি বহন করা ট্রলির কারণে ছোট ছোট কিছু দূর্ঘটনাও ঘটেছে। হরিপুরবাসীর স্বপ্নের সেতুর উপরেও বালির স্তপে পরিণত হয়েছে। হারিয়েছে স্বপ্নের সেতুর সৌন্দর্য্য। বালির স্তপে পড়ে একাধিক দূর্ঘটনাও ঘটেছে সেতুর উপরে। যেকোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছে এলাকাবাসী। এমনকি অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ভাগবাটোয়ারা নিয়েও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর একদম পাশ্ববর্তী স্থানে বালি উত্তোলণের কারণে হরিপুরবাসীর স্বপ্নের সেতুরও ক্ষতির আশংকা করছে স্থানীয়রা। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে এসমস্ত সমস্যা তৈরী হলেও আশ্চর্যজনক ভাবে হরিপুরের নেতামাতব্বরদের কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
সূত্র জানিয়েছে, হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের উর্ধ্বতন নেতাদের যোগসাজসেই এ বালি উত্তোলন হয়ে থাকে। প্রতি ট্রলি থেকে ১০০ টাকা থেকে ১৫০টাকা নিলেও বর্তমানে ট্রলি প্রতি ২০০টাকা করে নেওয়া হয়। প্রতিদিন ২০০-৩০০ ট্রলি বালি উত্তোলন করা হয় এখান থেকে। এসব টাকা কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ পৌঁছে যায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় স্থানীয় কিছু নেতাদের পকেটে।
এ ব্যাপারে হাটশ হরিপুরের কয়েকজন সচেতন নাগরিকের সাথে কথা হলে তারা জানান, অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনের টাকা দিয়ে মাদকের ব্যবসা করা হয়, সন্ত্রাসীদের লালন পালন করা হয়। এই বালির ঘাট যদি সরকারি ভাবে ইজারা দিয়ে পদ্মা নদীর সাইডে করা হয় তাতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব পাবে তেমনি অনেক ধরনের সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়া ফুলতলা রাস্তা সংলগ্ন যে স্থান থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে সেখানে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণ মহলের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে যে, বন্যার সময় বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে হরিপুর বাসী। নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, দিনরাত বড় বড় ড্রাম ট্রাকে ও অবৈধ ট্রলিতে বালু পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ধসে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আবার বালু তোলার কারণে নদের তীরবর্তী ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ঘর ও হরিপুরবাসীর স্বপ্নের সেতু শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু হুমকির মুখে।
তারা আরও বলেন, অবৈধ অনেক বালু ঘাট পরিচালন কারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন করলেও মিলন মন্ডলের বালির ঘাটের বিরুদ্ধে কোন আইন গত ব্যবস্থা গ্রহন না করায় ইউনিয়নবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। এ ভাবে বালি তুলতে থাকলে আগামী ১ বছরের মধ্যে নদীর পাশের ফসলি জমি, ভিটে ও বাড়িঘর,রাস্তা ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
এই বালি চক্র সিন্ডিকেটের মূলহোতা হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিলন মন্ডল। স্থানীয় কতিপয় কিছু নেতাদের, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে যুগ যুগ বালি সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এই সিন্ডিকেটের বিপক্ষে প্রতিবাদ করলে হামলা, মামলার ভয় দেখায়। হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের সচেতনমহল এই অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধের জন্য কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
Leave a Reply