ডেস্ক:করোনা সংক্রমণের হার কমার ওপর স্কুল-কলেজ খোলার সময় নির্ভর করছে। এজন্য সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে কোনো একটি সংখ্যা বিবেচনা করা যায় কি না সে বিষয়ে করোনা সংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ চাইবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয়। মহামারি করোনায় গত বছরের মার্চ থেকে টানা ১৭ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ১৫ অক্টোবরের পর থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খুলতে পারবে– এমনটিই বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের টিকা ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার রোডম্যাপ ঠিক করতে চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সেপ্টেম্বরের কোনো এক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা করে রেখেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী সাত দিনের মধ্যে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কি না তার জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারক সেল গঠন করা হবে।তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে সপ্তাহে দুদিন করে ক্লাস নেয়া হবে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে নেয়া হবে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সিলেবাস আরও সংক্ষিপ্ত হবে। পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা স্ব-শরীরে হবে নাকি মূল্যায়নভিত্তিক হবে তা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ক্ষেত্রে ফেসশিল্ড নিশ্চিত করা সাপেক্ষে খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। শিশুদের মাস্ক পরার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হয়।বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে ছাত্র- শিক্ষক -কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভ্যাকসিনের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আগামী সাত থেকে আট দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে টিকাদানের অবস্থা জানিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তা থেকে জানা যাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী- কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে কাদের টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং কাদের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে।
এ প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের আলাদা দুটি তালিকা থাকবে। একটিতে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে আরেকটিতে যাদের এনআইডি নেই। এনআইডি থাকা সত্ত্বেও যে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী এখনও টিকা দেয়নি তাদের দ্রুত টিকা দেয়া হবে। এ ছাড়া বয়স ১৮ বছর হওয়ার পরও যাদের এনআইডি নেই, তাদের অল্প সময়ের মধ্যে এনআইডি পাওয়ার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহায়তা করবে। তারা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবে।
যদি অল্প সময়ের মধ্যে এনআইডি পেতে অসুবিধা হয় তা হলে অন্য পরিচয়পত্রের (বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি হতে পারে বা জন্মসনদের মাধ্যমে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ টিকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কারিগরি সহায়তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার ব্যবস্থার কথাও ভাবছে মন্ত্রণালয় গত ১৮ আগস্ট সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং টিকা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্তের কথাও জানানো হয়।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন মহামারি পরিস্থিতি আরেকটু স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা। তবে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে যেকোনো দিন স্কুল খুলে দিতে তারা প্রস্তুত।একই দিন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও বলেছিলেন সংক্রমণের হার আরেকটু নিচে নামলে শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।
Leave a Reply