উইমেন ডেস্ক: তীব্র গরমে কদর বেড়েছে হাতপাখার। পূর্বপুরুষের এই পেশাকে আজও বুকে লালন করে রেখেছে কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের শতাধিক পরিবার। প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শরীর শীতল করা তালপাতার হাতপাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার কারিগরেরা। মালিয়াট গ্রামে দেখা যায়, কেউ তালপাতাগুলো পানি দিয়ে ভেজানোর কাজ করছেন, কেউ পাতা শুকাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পাতা কেটে সাইজ এবং বাঁশ চিরে শলা তৈরি করছেন। কেউবা সুতা ও বাঁশের শলাতে রং লাগাচ্ছেন। এভাবেই কয়েকজনের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি পাখাগুলো কেউ আবার বিক্রি করতে নেওয়ার জন্য বোঝা বাঁধছেন।
কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালিয়াট গ্রামের শতাধিক পরিবারের প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাধিক নারী ও পুরুষ পাখা তৈরির কাজ করেন। পাখা তৈরির উপকরণ তালপাতা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ ও তৈরি পাখা বিক্রির কাজ মূলত পুরুষেরা করেন। তবে সংসারের কাজের পাশাপাশি রং মিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুঁই ও সুতো দিয়ে পাখা বাধাঁর কাজটি করেন নারীরা। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পাখা তৈরির কাজে সহযোগিতা করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাখা তৈরির প্রধান কাঁচামাল তালপাতা পিচ প্রতি কেনা হয় ৫ থেকে ৮ টাকা দরে। প্রতি পিচ পাতায় ৮ থেকে ১০টি পাখা তৈরি করা যায়। একটি বাঁশ কেনা হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রতিটি বাঁশে শতাধিক পাখা হয়। প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ হয় ৫ থেকে ৬ টাকা। তৈরিকৃত পাখাগুলো পাইকারি বিক্রয় হয় ১০ থেকে ১২ টাকায় আর খুচরা বিক্রয় হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখানকার তৈরিকৃত পাখাগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও বিক্রি করা হয়।
এ বিষয়ে মালিয়াট গ্রামের করম আলী শেখের ছেলে রিজাউল শেখ ও কাদের মালিথার ছেলে বাবলু মালিথা বলেন, খুব ছোট থেকেই এ কাজ করে আসছি। বিদ্যুৎ আর যান্ত্রিক যুগে হাতপাখার চাহিদা কমে গেলেও পৈতৃক পেশা হিসেবে ধরে রেখেছি। তাঁরা আরও বলেন, নারী ও পুরুষ সবাই মিলে দলবেঁধে আমরা কাজ করি। প্রতিটি দল দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ পিচ পাখা তৈরি করি। নারী কারিগর রহিমা বেগম জানান, ঘরের কাজের পাশাপাশি পাখা তৈরির কাজ করছেন। যা আয় হয়, তাতে সংসার ভালোভাবে চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কলেজছাত্রী বলেন, বিজ্ঞানের যুগেও আমাদের এলাকায় ঐতিহ্যবাহী তালপাখা তৈরি হয়।পড়াশোনার পাশাপাশি তালপাখা তৈরি করে নিজের খরচ মেটাই।
একই গ্রামের রহমত আলী বলেন, সংরক্ষণের সুব্যবস্থা না থাকায় সিজনভিত্তিক গরমকালে পাখার কাজ করি। অন্যান্য সময় অন্য কাজ করে সংসার চালাই।
কুমারখালী পৌরবাজার এলাকার খুচরা বিক্রেতা সালাউদ্দিন (৪৫) বলেন, ২৫ বছর ধরে পাখার ব্যবসা করি। বৈদ্যুতিক আর প্লাস্টিক পাখা এসে আগের মতো আর তালপাতার পাখার চাহিদা নেই। তবুও শৌখিন হিসেবে অনেকেই কেনেন।
বৃহস্পতিবার উপজেলার সাপ্তাহিক হাট বসে বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রামে। এ হাটে পাখা কিনতে আসা চৌরঙ্গী মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক আনিছুর রহমান বলেন, ছাত্র জীবনে হাত পাখার ব্যাপক ব্যবহার করলেও বাড়িতে এখন বৈদ্যুতিক পাখা। তবে ঐতিহ্যবাহী হাতপাখার প্রচলন গ্রাম বাংলায় এখনো চোখে পড়ার মতো।
কুষ্টিয়া বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান মকুল বলেন, হাতপাখা একটি শিল্প। কারিগরদের ভাগ্যবদলে কাজ করছে বিসিক। ইতিমধ্যে কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন উদ্যোক্তাদের প্রচার ও প্রসারের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এ ছাড়া ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
Leave a Reply