কুষ্টিয়ায় উডল্যান্ড পার্টিকেল বোর্ড মিলে পরপর দুই দিনে বয়লার দুর্ঘটনায় দুই শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। একইভাবে দুর্ঘটনা ঘটায় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি বড় কোনো ঘটনা নয়, শ্রমিকরাও বিপদমুক্ত আছেন। কুষ্টিয়া-পাবনা সড়কের জুগিয়া-বারখাদায় অবস্থিত উডল্যান্ড প্লাইউড এবং পার্টিকেল বোর্ড মিল। এই মিলে ২৫ এপ্রিল দুপুর ২টায় বয়লার দুর্ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হন শ্রমিক রবিউল ইসলাম। তার বাড়ি ত্রিমোহনী বারখাদায়। এর আগের দিন বয়লার দুর্ঘটনায় মো. রানা নামে আরেক শ্রমিক দগ্ধ হন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার হরিপুরে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে রবিউলকে। তাকে ঘিরে আছেন মাসহ তার স্বজনরা। রবিউলের হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গা দগ্ধ হয়েছে। রবিউলের মা সাহিদা খাতুন বলেন, ‘আমিও একই কারখানায় কাজ করি। আমি করি ঝাড়ু দেয়া ও পরিস্কারের কাজ। ওই সময় আমি ছেলের কাছেই ছিলাম। হঠাৎ করে বয়লারের মধ্য থেকে আগুন বের হয়ে আমার ছেলেকে ঘিরে ধরে। আমি তখন চিৎকার করে উঠি।’ রবিউল বলেন, ‘এখানে আগের দিনও একজন শ্রমিক পুড়ে গেছে। তার ক্ষতি আরও বেশি হয়েছে। তার মুখ পুড়ে গেছে। তাকেও হাসপাতালে আনা হয়। কারখানার লোকজন তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই বয়লারের মুখটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ময়লা আটকে আছে। এ কারণে খড়ি (লাকড়ি) কম বেশি হলেই বয়লারের মুখ খুলে ব্যাকফায়ার হচ্ছে। আমিও খড়ি দিচ্ছিলাম। হঠাৎ এর মুখ থেকে ছুটে আসে আগুনের হলকা। আগুন আমাকে ঘিরে ফেললে আমি লাফ দিই। আর এ কারণেই আমার পুড়েছে কম। ‘ওই সময় বয়লারের ওপরের ঢাকনিও খুলে যায়। পাশের ইট খুলে খুলে পড়েছে। এখানে আরও লোক থাকলে সবারই একই অবস্থা হতো। কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো গা নেই। কিছু বললেই কাজ ছেড়ে চলে যেতে বলে।’ রবিউল জানান, তাদের কাজ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বেতন মাত্র ৮ হাজার টাকা। এ বিষয়ে কিছু বলতে গেলে গেট দেখিয়ে বের হয়ে যেতে বলা হয়। তার মা সাহিদা কাজ করেন দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে। রোববারের দুর্ঘটনার ব্যাপারে কথা হয় কারখানার প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক তুহিন জোয়ার্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাটির হিটারে বেশি খড়ি দেয়ার কারণে ব্যাকফায়ার হয়েছে। এক শ্রমিক সামান্য আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কাজনক কিছু নয়। আমাদের চিকিৎসক সহকারী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। আগের দিনের দুর্ঘটনা সম্পর্কে কারখানার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটিও বড় কোনো ঘটনা নয়। ডাক্তার ৪ ঘণ্টা অবজারভেশনে রেখে ছেড়ে দিয়েছেন।’
Leave a Reply