উইমেন ডেস্ক: দীর্ঘ দিন ধরে লিভার সিরোসিসে ভুগছেন ইমন হোসেন (২৪)। সম্প্রতি টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। কথা বলতে পারলেও শরীরে শক্তি পান না। কয়েক বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। বেকার বাবা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী মা আর ছোট ভাইয়ের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে।
এমন দুঃখ-দুর্দশায় ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন ইমন হোসেনের পরিবার।
জানা গেছে, ৪ বছর ধরে লিভার সিরোসিসের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছেন ইমন। অসুস্থতার কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু তার অসহায় পরিবারের পক্ষে এত টাকা যোগান দেওয়া সম্ভব নয়।
ইমন হোসেন কুষ্টিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আড়ুয়া পাড়া এলাকার শহীদ লিয়াকত আলী সড়কের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। ইমনের বাবা তার চাচার সঙ্গে চালের ব্যবসা করতেন। কয়েক বছর আগে চাচা মারা যাওয়ার পর তিনি বেকার হয়ে পড়েন। ইমনের মা একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি করেন। তার ছোট ভাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। কালিতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতেন ইমন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন অসুস্থ হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা।
ইমনের মা বেবি সুলতানা বলেন, আমাদের সংসার সচ্ছল ও সুখের ছিল। ছেলে পড়াশোনা করত, স্বামী ব্যবসা করতেন। আমাদের সেই সুখ ২০১৯ সালে বিষাদে রূপান্তরিত হয়। ২০১৯ সালে ছেলের লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। দিন দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক ও স্বজনদের পরামর্শে আমরা তাকে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন হাসপাতাল, রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লিভার, পরিপাকতন্ত্র ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের লিভার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ এবং একই মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. আব্দুল আলীমের তত্ত্বাবধানে রাজশাহীতে প্রায় দেড় বছর চিকিৎসা করানো হয়।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর পরে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করিয়েছি। তাতেও সুস্থ না হওয়ায় এ বছরের আগস্ট মাসে ভারতের হায়দ্রাবাদে কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। সেখানকার চিকিৎসক জানিয়েছেন, আমার ছেলের লিভারে ইনফেকশন হয়ে প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। শরীরে একটি নতুন লিভার স্থাপন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু অর্থের অভাবে আমরা নিরুপায়। এরই মধ্যে সব কিছু চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। দুবেলা দুমুঠো খাবার মতো অবস্থা এখন আর আমার পরিবারে নেই। অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ, আপনারা আমার ছেলেকে বাচাঁন। ছেলেকে বাঁচাতে ৩০ লাখ টাকা দরকার।
সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়ে ছেলেকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের জুন মাসে আমার ছেলে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। তারপর লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। ৪ বছর ধরে সে রোগে ভুগছে। কয়েক বছর ধরে আমিও বেকার হয়ে আছি। পরিবারে উপার্জনক্ষম বলতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী স্ত্রী রয়েছে। সে কয়েক হাজার টাকা বেতন পায়। তাতে সংসার চলে না। কখনো অর্ধাহারে আবার কখনো অনাহারে দিন কাটছে।
তিনি আরও বলেন, ছেলের অবস্থা ভালো না। ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ধারদেনা করে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছেলের শরীরে একটি নতুন লিভার স্থাপন করার কথা বলেছে ডাক্তাররা। তাতে প্রয়োজন প্রায় ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। আমি সবার কাছে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা কামনা করছি। আমার পক্ষে ছেলের চিকিৎসা করার সক্ষমতা নেই। ঠিকমতো সংসারই চলে না। চিকিৎসা করাব কী দিয়ে?
অসুস্থ ইমন বলেন, আমি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। কথা বলতে পারলেও শরীরে শক্তি পাই না। ভারতে অপারেশন করাতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা প্রয়োজন। শরীরে একটি নতুন লিভার স্থাপন করাতে হবে। কিন্তু আমার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অর্থের অভাবে বর্তমানে চিকিৎসা বন্ধ। আমি সবার কাছে সাহায্য চাই। সবাই আমাকে সাহায্য করুন, আমি বাঁচতে চাই।
প্রতিবেশীরা বলেন, ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি এখন নিঃস্ব। বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। অনাহারে- অর্ধাহারে দিন পার করছে তারা। অর্থের অভাবে ছেলেটির চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন লিভার স্থাপন করার জন্য অনেক টাকা দরকার। এত টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই তাদের। এজন্য ইমনকে সুস্থ করতে সবাই সহযোগিতা করুন।
Leave a Reply