উইমেন ডেস্ক:মাজাব্যথা নিয়ে চরম কষ্টে আছি। তারপরও এ ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে হেলেদুলে যেতে হচ্ছে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ সড়কেই গাড়ি থেকে পড়ে আমার মেরুদণ্ডের হাড় সরে যায়। বাবারে দেশ অনেক এগিয়েছে, এবার এ সড়ক এগিয়ে নিতে কিছু করো।’ কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ মসলেম শেখ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার জোড়পুকুর বাজারে ইজিবাইকে যাওয়ার সময় কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে।
মসলেম শেখের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বড় মেয়ে তহমিনা খাতুন। তিনি বলেন,চিকিৎসার জন্য আব্বাকে প্রতি সপ্তাহে হাসপাতালে নিয়ে হয়। গত মাসে ইজিবাইক উল্টে গেলে আব্বার কোমরের হাড় সরে যায়। সেই থেকে আব্বা আর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়ার আমলা বাজার পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর মহাসড়কের প্রায় স্থান খানাখন্দে ভরে গেছে। মাঝেমধ্যে কার্পেটিং ওঠে পাথর বেরিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও আবার বড় খাদ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ট্রাক-বাস হেলেদুলে যেতে দেখা যায়।
ওই সড়কের পাশে গাংনী উপজেলা জোড়পুকুর বাজার। সেখানকার দোকানি হাবিবুর রহমান তাঁর দোকানের সামনের সড়কে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, মাস দুই আগে এখানে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। রাতে পণ্যবাহী একটি ট্রাক উল্টে যায়। এরপর আরও দুটি ট্রাক ও একটি বাস বিকল হয়ে পড়ে থাকে এখানে। পরের দিন সকালে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা মিলে ট্রাক তুলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
তেরাইল বাজার ছাড়িয়ে একটি ইটভাটার সামনে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই খানাখন্দে ভরা। একেবারে কাত হয়ে ধীর গতিতে যাচ্ছিল একটি হলুদ রঙের ট্রাক। সড়কের মাঝখানে বড় একটি গর্ত পেরিয়ে গাড়ি থামান চালক।
ট্রাকচালক লিয়াকত হোসেন বলেন, কুষ্টিয়া–পাকশী থেকে বালুবোঝাই করে মেহেরপুরে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন তিনি। এ সড়কে দিনে কখনো দুবারও আসতে হয়। এক বছর ধরে কুষ্টিয়ার কাতলামারি এলাকা থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ অংশ খানাখন্দে ভরে গেছে। খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়। অনেক স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে মাঝেমধ্যে ইট ফেলে সড়ক বিভাগ। তারপরও প্রতিদিন গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে থাকছে সড়কের পাশে।
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আন্তজেলা রুটের বাসচালক আজিজুল ইসলাম প্রতিদিন তিনবার যাত্রীবাহী বাস নিয়ে যাতায়াত করেন কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কে। তিনি বলেন, সড়কের বেহাল দশা কয়েক বছর ধরে। কিন্তু সংস্কার হচ্ছে না। দিনে কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে এ বেহাল সড়ক দিয়ে। নানা স্থানে কার্পেটিং ওঠে গর্ত হওয়ার কারণে যানবাহন চলতে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ছে। রাস্তা খারাপ হওয়ায় গাড়ির টায়ার দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।
ওই সড়কের বামুন্দি এলাকায় খানাখন্দ ঢাকতে সওজের ইট বিছানো স্থানে একটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ট্রাকের সামনে একটি গাছের ডাল বেঁধে রাখা হয়েছে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির সংকেত বোঝাতে। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে ট্রাকের সহকারী জুয়েল রানা বলেন, আগের রাতে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ট্রাকটি সড়কে গর্তে পড়ে সামনের চাকা ভেঙে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। মালবোঝাই ট্রাক, এ কারণে ট্রাক পাহারা দেওয়া হচ্ছে। চালক মিস্ত্রি ডাকতে গেছেন।
একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানে জোড়পুকুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থী যাচ্ছিল।
তাদের মধ্যে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিকা খাতুন বলে, এ সড়ক একেবারে বেহাল। বড় গাড়ি গেলে ধুলোবালিতে অন্ধকার হয়ে পড়ে এলাকা। বিশেষ করে ভ্যানে চড়ে গেলে ট্রাকের ধুলোয় চোখে কিছু দেখা যায় না। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
জেলা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, টানা দুই বছর ধরে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কটির সংস্কারকাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। ওই সড়কে চলাচল করতে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, এমন একাধিক অভিযোগ সওজে জমা পড়েছে। এ ব্যাপারে সওজের প্রধান কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তারা দ্রুত দরপত্র করে সড়কটি সংস্কার করার কথা জানিয়েছে। তারপরও দেরি হচ্ছে কেন, তা বলতে পারছেন না তিনি।
সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর প্রধান সড়কটি সংস্কারের জন্য ৬৪৩ কোটি টাকার একটি দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। এবার একেবারে নতুন করে সড়কটি নির্মাণ করা হবে, যাতে দ্রুত নষ্ট না হয়। দরপত্রের প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। আশা করা যায় খুব দ্রুত বিষয়টি সমাধান হবে।
Leave a Reply