উইমেন ডেস্ক : কুষ্টিয়ার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫টি ইউনিটের আংশিক কমিটি ঘোষণা নিয়ে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে এই পাঁচ ইউনিটে ষোষণা করা হয়েছে পাল্টাপাল্টি কমিটি। এতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।

রবিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন একাংশের নেতাকর্মীরা। এর কিছুক্ষণ পরই আরেকটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েও মিছিল করেছে ছাত্রলীগের আরেকটি একাংশ।

দলীয় সুত্রে জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর শনিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ স্বাক্ষরিত পৃথক ৫টি প্যাডে কুষ্টিয়ার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পাঁচটি ইউনিটের আংশিক কমিটি অনুমোদন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। কমিটি ঘোষণার পর স্ব-স্ব ইউনিটের নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ এই ২ নেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তারা তাদের ফেসবুক আইডিতে অভিনন্দন জানান। বিভিন্ন মহল থেকে নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানানো হয়।

ওই কমিটি ঘোষণার মাত্র ২৪ ঘন্টা ব্যবধানে ২৩ অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ তার ফেসবুক আইডিতে জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে নতুন করে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৬টি ইউনিটের আংশিক কমিটি অনুমোদনের বিজ্ঞপ্তি পোষ্ট করেন। এই বিজ্ঞপ্তিতেও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের স্বাক্ষর রয়েছে।

একই ইউনিটের ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে নতুন করে কমিটি ঘোষণা নিয়ে ছাত্রলীগসহ আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয় নানা প্রশ্ন। সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের আইডি থেকে প্রচারিত এই সকল কমিটি সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, তাই সকলকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক তার নিজ ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন। তিনি রাত পৌনে ১০টার দিকে দেয়া স্ট্যাটাসে সভাপতি বলেন- ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া জেলা শাখার আওতাধীন যে পাঁচটি কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল সেটায় সঠিক। ২৩ অক্টোবর কোন কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়নি। আমার স্বাক্ষর নকল করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

অপরদিকে, সভাপতির দেয়া স্ট্যাটাসের ১০ মিনিট পর সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ তার নিজ ফেসবুক আইডি থেকে পাল্টা স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি দাবী করেন গতকাল (২২-১০-২০২২ ইং তারিখে) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া জেলা শাখার আওতাধীন যে পাঁচটি কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল সেটা সঠিক নয়। ইতোপূর্বে কখনোই আমরা হাতে লিখে কোন কমিটির অনুমোদন দেয়নি। ২৩-১০-২০২২ইং তারিখে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমার স্বাক্ষর ও সীল নকল করে গতকাল বিভ্রান্ত ছড়ানো হয়েছে। তাই সকলকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। তবে জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক রক্তিম ঘোষ জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, শনিবার অনুমোদন দেয়া পাঁচটি কমিটি সঠিক। রবিবার কোন কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়নি। কিছু অসাধু মহল স্বাক্ষর নকল করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাই সকলকে বিভ্রান্তি না হওয়ার আহবান জানান তিনি।

সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি এই স্ট্যাটাস নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছে নেতা-কর্মীরা। কমিটি অনুমোদন নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। শনিবার ঘোষিত কমিটির নেতৃবৃন্দ জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের হঠকারী ও দল ভাঙ্গনের স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে গতকাল রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করে মজমপুর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তারা জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই ফেসবুকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া একটি ভিডিও ক্লিপ দেখা যায়।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক জানান, ২২ অক্টোবর ঢাকায় আমি ও সাধারন সম্পাদক যৌথভাবে স্বাক্ষর করে ৫টি ইউনিটের আশিংক কমিটি অনুমোদন দিয়ে রাতে কুষ্টিয়া ফিরে আসি। রবিবার ঘোষিত কমিটিতে আমি স্বাক্ষর করিনি।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, শনিবার আমি ও সভাপতি একই জায়গায় ছিলাম। আমার কাছে কমিটির কম্পিউটার প্রিন্ট আউট কপি ছিলো। পরে সে আমার কাছে চলে যায় এবং কিছুক্ষণ পরেই দেখি হাতে লেখা ৫টি কমিটি ফেসবুকে প্রকাশ করে। ওই কমিটিতে আমি স্বাক্ষর করিনি।