কখনোবা কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোড, বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেটেরে সামনে আবার কখনো বা কুষ্টিয়া পৌরসভার সামনের সড়কে সারি সারি করে ইফতার সামগ্রীর প্যাকেটের সাথে পানির বোতল থরে থরে সাজানো। রোজার শুরু থেকে প্রতিদিন ইফতারের আগে এ দৃশ্য দেখা যায় কুষ্টিয়া শহরের এসব সড়কগুলোতে।
এসব সড়কে চলাচলরত ইজিবাইক চালক কিংবা রিকশা চালক অথবা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া রোজাদাররা যে যার মতো করে একটি প্যাকেট নিয়ে চলে যান। মূলত কুষ্টিয়া শহরের অসহায়, দরিদ্র কিংবা স্বল্পআয়ের দিনমজুরদের জন্য এমন ব্যতিক্রমী ইফতারের আয়োজন করছে কুষ্টিয়ার নারী বাতায়ন নামক একটি সংস্থা।
কুষ্টিয়ার বিশ্বস্ত খাদ্যা ও মিষ্টান্ন উৎপাদন প্রতিষ্ঠান মৌবনের উদ্যোগে এই নারী বাতায়ন পরিচালিত হয়ে আসছে। নারী বাতায়ন নামের এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য এমন মহতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশব্যপী ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন চলাকালীন স্বল্পআয়ের দিনমজুর শ্রমিকদের জন্য এই ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছেন তারা।
ইফতারের এক ঘণ্টা আগে তাদের রাস্তায় দেখা যায়। এসময় তারা পথচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ আপনি কি রোজা আছেন? থাকলে ওখান থেকে ইফতার নিয়ে যান।’ করোনাকালে এভাবে ইফতার পেয়ে রোজাদাররাও অনেক খুশি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন বিকেল ৫টার দিকে ইফতারের জন্য তৈরীকৃত প্যাকেট একেকদিন শহরের একেক সড়কে রাখা হয়।
প্রতি প্যাকেটে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বুন্দিয়া, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, খেজুর রাখা হয়। সঙ্গে থাকে এক বোতল বিশুদ্ধ খাবার পানি। সড়কের পাশে ফুটপাথে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় প্যাকেটগুলোকে।
শহরতলীর মঙ্গলবাড়ীয়া থেকে রিকশা নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আগের মতো যাত্রী নেই। সংসারে ৫জন খানেওয়ালা। দিনশেষে আড়াইশ টাকা আয় হয়েছে। দিনভর যা আয় করিছি তা দিয়ে সংসারের জন্য চালডাল তেল লবন কিনতি হবি। ইফতারি কিনবো ক্যাম্বা কইরি। রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা আমাকে ডেকে এই ইফতারের প্যাকেট দিলো। আমিও নিয়ে নিলাম। যারা দিচ্ছে তাদের জন্য অনেক দোয়া করি বলে জানালেন তিনি।
রিকশা চালক কুদ্দুস আলী বলেন, প্রয়োজনের তাগিদেই রিকশা নিয়ে রাস্তায় বাইর হইছি। বেলা ডুইবি যাচ্ছে। ইফতারের সুময় হয়ে গেলে। কি করবো ভাবছিলাম। হঠাৎ করে এরা ডেকে ইফতারের বাক্স হাতে ধরিয়ে দিলো। রাস্তার পাশেই রিকশাই বসে ইফতার করলাম।
সংগঠনের সদস্য আশিকুজ্জামান রনি বলেন, এই রমজানে এবং বিশেষ করে লকডাউনের কারণে শহরের কিছু রিকশা চালক, অটো চালক, পথচারী ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জন্য ইফতারের আগ মুহূর্তে আমরা নারী বাতায়ন সংগঠনের মাধ্যমে শতাধীক ইফতার সামগ্রীর প্যাকেট সড়কের এসব ফটুপাতে রাখছি। যাদের প্রয়োজন হচ্ছে তারা নিয়ে যাচ্ছে। পুরো রমজান মাস এভাবে অসহায় মানুষদের মুখে ইফতার সামগ্রী তুলে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর বলেও জানান তিনি।
মৌবনের নির্বাহী পরিচালক ও নারী বাতায়নের সভাপতি সাফিনা আনজুম জনী বলেন, নারীদের উন্নয়ন ও নারীদের স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছে নারী বাতায়ন সংস্থাটি। যেটির উদ্যোগে রয়েছে মৌবন।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছর আমাদের প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের মসজিদ ও অসহায় দুস্থদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে থাকি। কিন্ত এবার লকডাউনের কারণে আমরা মুলত এইভাবে প্যাকেট করা ইফতার সামগ্রী ও পানীয় ইফতারের আগ মুহূর্তে রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে শহরের রিকশাচালক অটোচালক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। এটি পুরো রমজান জুড়েই চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, নারী বাতায়ন সংগঠনটি একটি মৌবন উদ্যোগ। মুলত নারীদের উন্নয়ন ও কল্যাণে পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করে। এটি একটি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অনুমোদনকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
Leave a Reply