উইমেন ডেস্ক : চিকিৎসাসেবাসহ বেশ কয়েকটি কারণে চারবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদক প্রাপ্তি ঘটেছিল কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের। যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামসহ টেকনিক্যাল যন্ত্রপাতি থাকলেও, নেই দক্ষ জনবল। ফলে হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। অস্ত্রোপচারসহ জরুরি সেবার জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে জেলা অথবা বে-সরকারি ক্লিনিকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২৭৮টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৯৩টি পদ। শূন্য পদের মধ্যে ৩৩ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে ২১টি পদ শূন্য। এর মধ্যে ১১টি কনসালট্যান্ট পদের ১১টিই শূন্য। অফিস সহায়কের ৩টি পদের ৩টিই শূন্য। ১৬টি পিয়ন পদের ১৫টি পদই শূন্য। ২টি আয়া পদই শূন্য। ৩টি ওয়ার্ডবয়ের মধ্যে ৩টি পদই শূন্য। ৩৭টি সেবিকা পদের ৯টি শূন্য। ২০০৯ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নত করা হয়। সে সময় রোগীর খাবার ও ওষুধের অনুমোদন দেওয়া হলেও চিকিৎসক পদগুলো ফাঁকা ছিল। ২০২১ সালে চিকিৎসকের অনুমোদন দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
আরও জানা গেছে, প্রায় ৪ লাখ মানুষের একটি মাত্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৮০-৯০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ জন রোগী সেবা নেন। শয্যা, ওষুধ, খাবার ও জনবলসহ নানামুখী সংকটের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। জনবল না থাকায় অপারেশন থিয়েটার ও ইসিজি যন্ত্র থাকলেও তা বন্ধ রয়েছে বছরের পর বছর। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে থেকে চিকিৎসক ডেকে কিছু কার্য সম্পাদন করা হয়। কিন্তু জরুরি অপারেশন থিয়েটার, আইসিসিইউ, সিসিইউ, ভ্যান্টিলের না থাকায় হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোকসহ জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে চিকিৎসকরা কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দায় সারছেন।
গতকাল বুধবার সকালে সরজমিনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে পুরুষের তুলনায় নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। রোগী ভর্তি আছেন প্রায় শতাধিক। শয্যা সংকটে বারান্দায় ও মেঝেতে ঠাঁই নিয়েছেন রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের লম্বালাইন। এ সময় দেখা যায় প্রায় অর্ধাশতাধিক নারী টিকিট কেটে ও টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে তালা ঝুলছে।
পরিসংখ্যানবিদ একাই অফিস সহায়কসহ পাঁচ পদের দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় কথা হয় যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের গৃহিণী বিলকিস আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, লম্বা লাইনে প্রায় আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কাটতে পেরেছি। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। চাপড়া ইউনিয়নের ভাঁড়রা গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, অনেকে আগে টিকিট কাটার জন্য লাফালাফি করছে। অনেকে আবার জড়াচ্ছেন বাগবিত ায়।
বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগী এবং স্বজনরা জানান, ‘যে সমস্ত রোগীদের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ছে, তাঁদের জেলা বা বে-সরকারি ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। অতি সাধারণ অস্ত্রোপচারের জন্য যেতে হচ্ছে অন্যত্র। মানুষ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা নারীরা। অনেকেই নরমাল ডেলিভারীর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু নানাবিধ কারণে যাদের স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সিজারের মাধ্যমে তাদের সন্তান প্রসব করানো হচ্ছে।’
Leave a Reply