নিজস্ব প্রতিবেদক : অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বারবার সমালোচিত ইন্দুরকানী এফ করিম আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন এখনও স্বপদে বহাল আছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের পাহাড় সমান অভিযোগ থাকলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত বুধবার মাদ্রাসার সামনে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন।
জানাযায়, উপাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেনের গ্রামের বাড়ি জেলার মঠবাড়িয়া তুসখালী এলাকায়। তিনি দারিদ্র্য পরিবারে বড় হয়েছেন। টগড়া দারুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসায় পড়ালেখা শেষ করেন। টগড়া মাদ্রাসার পড়ালেখা অবস্থায় জামায়েতের রাজনীতিতে যোগদান করেন। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এফ করিম আলিম মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে যোগাদান করেন। তারপরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ওলামালীগের পরিচয় দিয়ে চলতেন। তার বড় ছেলে জাহিদ হাসান শান্ত ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় চলতেন। পাঁচ বছর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ-আলম অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর থেকে অধ্যক্ষ শাহ আলমের মাদ্রাসায় আসা সম্ভব হয়নি। পরে উপাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন মাদ্রাসার একাডেমিক দায়িত্বসহ সকল বিষয় দেখাশুনা করতেন। ইকবাল হোসেন ক্ষমতা পয়ে মাদ্রাসায় সরকারি অনুদান আত্মসাৎ সহ সকল প্রকার দুর্নীতিতে জরিয়ে পড়েন। তিনি মাদ্রাসায় দুর্নীতি করে টগড়া গ্রামে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাড়ি ও তার নিজ এলাকায় জমি কিনেছেন। এছাড়া তার দুটি বালুর ড্রেজার ও একটি কার্গো জাহাজ রয়েছে। যে শিক্ষক নকল সরবারহ করবে তাকে পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হতো। যদি কোন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে নকল সরবারহ না করে, ওই শিক্ষককে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হতো না। এমনকি পরীক্ষার আগে উত্তর পত্র বলে দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন ইকবাল।
একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা, ক্লাস পার্টি এবং বিবিধ খরচের নামে রসিদ ছাড়াই টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। উপবৃত্তির দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জন প্রতি এক হাজার টাকা করে নিতেন। মাদরাসার নাম করে একটি সাদা কাগজে এসব ফি বাবদ টাকা উঠিয়ে নেন উপাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়ার সময় ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। এগুলো কখনোই প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা হয়নি। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে না পড়িয়ে তার বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যেতে বলতেন উপাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন। তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাদ্রাসার ম্যানিজিং কমিটির এক অভিভাবক সদস্য বলেন, ২০২২ সালে চারটি নিয়োগ হয়েছিল। তখন মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম ইমন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও সদস্য সচিব উপাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন ছিলেন। তখন তারা দুইজনে মিলে তিনটি নিয়োগে ২৭ লক্ষ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। একটি নিয়োগ অধ্যক্ষের শাহ-আলমের ছেলেকে দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত উপাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেনে এর কাছে অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।
অধ্যক্ষ শাহ-আলম জানান, আমি অসুস্থ হাওয়ার পর থেকে মাদ্রাসায় মাঝে মাঝে যাওয়া আসা করতাম। কিন্তু আমার অসুস্থতার পর থেকে মাদ্রাসার পুরো দায়িত্ব উপাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেনকে দেওয়া হয়। ৬-৭ বছরের হিসাব উপাধ্যক্ষ দিতে পারবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এফ করিম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ অনুযায়ী তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন।
Leave a Reply