আরবি নববর্ষ………
বিদায় ১৪৪৫ হিজরী। স্বাগতম ১৪৪৬ হিজরী। সকল পাপ- পঙ্কিলতা ঝেড়ে নব উদ্যমে উজ্জীবিত হোক প্রতিটি সত্তা। পরম করুণাময়ের রহমের অঝোর ধারায় সিক্ত হোক প্রতিটি তৃষিত হৃদয়। হিজরী ক্যালেন্ডার শুধু একটি গতানুগতিক বর্ষপঞ্জি নয় বরং এর সাথে মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যেমন রোজা, হজ ইত্যাদি জড়িত। সুতরাং মুসলমানদের জন্য হিজরী তারিখের হিসাব রাখা জরুরি। শুধু জরুরী নয় বরং ফরজে কেফায়া। হিজরী শব্দটা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরত শব্দ থেকে নির্গত। যেহেতু প্রিয় নবীর হিজরতের বছর থেকে এই সাল শুরু হয় এ কারণেই আরবি বর্ষপঞ্জিকে হিজরী ক্যালেন্ডার বা হিজরী বর্ষপঞ্জি বলা হয়। বিশুদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায় হিজরী সনের সূচনা হযরত ওমর রা এর শাসনামলেই হয়েছিল। হযরত ওমর রা এর কাছে ইরাকের বসরার গভর্নর আবু মুসা আশআরী এক চিঠিতে লেখেন, যার বক্তব্য ছিল, “আমিরুল মুমিনিন আপনার পক্ষ থেকে আসা রাষ্ট্রের বিভিন্ন চিঠিপত্রে কোন সন তারিখ না থাকায় আমরা দিন ও কাল নির্ধারণে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। আপনার নির্দেশ পালনে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছি। এ গুরুত্বপূর্ণ পত্র পাওয়ার পর হযরত ওমর রা সাহাবীদের নিয়ে পরামর্শে বসলেন। যখন এ বিষয়টি তাদের সামনে উত্থাপন করা হলো তখন প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ মতামত উপস্থাপন করলেন। কেউ বললেন নবীজির জন্ম দিবসের বছর থেকে নতুন বছর শুরু করা হোক, কেউ বললেন নবুওয়াতের বছর থেকে, কেউ বললেন হিজরতের বছর থেকে, আর কেউ বললেন নবীজির মৃত্যুর বছর থেকে নতুন বছর শুরু করা হোক। হযরত আলী রা ও অভিজ্ঞ সাহাবীগণ হিজরতের বছর থেকে শুরু করার জোর দাবি জানালেন ফলে সাহাবীদের সর্বসম্মতিক্রমে মহানবী এর মদিনায় হিজরত করার ঐতিহাসিক দিন থেকে নতুন সন শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়।( ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৩৭১৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য) ভারতীয় উপমহাদেশে ১৭৯০ সালে অমুসলিমদের রাষ্ট্রীয় সন স্বীকৃতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ বছর হিজরি সাল রাষ্ট্রীয় সাল হিসেবে স্বীকৃত ছিল।
শেষ কথা, প্রত্যেক জাতির আলাদা ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে। মুসলমানদেরও রয়েছে। প্রত্যেক ইতিহাস, সংস্কৃতি কোন না কোন ধর্মীয় ভাবাবেগ বা বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত। বর্ষপঞ্জী ও এই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং মুসলমানদেরও মুসলিম সংস্কৃতি তথা ইসলামী তাহজিব তামাদ্দুন চর্চা করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পূর্ণ অনুসরণ করা উচিত।
মুফতি যুবায়ের আহমাদ
ইমাম ও খতিব কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পিরোজপুর।
Leave a Reply