1. akmolbangladesh@gmail.com : Press Times :
শিরোনামঃ
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস পিরোজপুরে দায়িত্বরত অধিনায়কের পিরোজপুরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস পালিত পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু’র বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপ্রপ্রচারের অভিযোগ পিরোজপুরে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের সাথে নবাগত জেলা প্রশাসক এর পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা বরিশাল রেঞ্জের নবাগত ডিআইজি পিরোজপুর প্রেসক্লাব পরিদর্শন পিরোজপুরে প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে নবাগত জেলা প্রশাসক এর মতবিনিময় পিরোজপুরে ওয়ার্ল্ড ভিশন এর গ্লোবাল ক্যাম্পেইন ENOUGH প্রচারাভিযান উদ্বোধন  পিরোজপুরে আসন্ন দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে -ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জ পিরোজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই গ্রুপের মধ্যে হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন পিরোজপুরে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

সেই ভয়াল দিনের কথা মনে হলে, আজও বুক কেপে উঠে

  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১
  • ১০০ মোট ভিউ

বিগত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ছিলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে ট্রাকের ওপর বানানো মঞ্চে সভা চলছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে জিরো পয়েন্ট, গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ। সভা মঞ্চে আমরা ফটোসাংবাদিকরা যে যার পজিশনে দাঁড়িয়ে আছি, যাতে ভালো একটা ছবি তুলতে পারা যায়। একটু পরে চলে এলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি। ট্রাকের পেছনে লাগানো কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নেত্রী মঞ্চে উঠেই হাসিমুখে সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আমরা ফটোসাংবাদিকরা ওই হাসিমুখে হাত নাড়া আর দর্শকদের এই দুটোর ছবি তুলছি। শ্লোগান চলছে। তখনো কয়েকজন শীর্ষ নেতার বক্তব্য বাকি। নেতাদের বক্তব্য শুরু, নেত্রীর বক্তব্যের অপেক্ষা করছি। নেতার বক্তব্য শেষে নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুরু হয়ে গেছে। আমার সাথে নেত্রীর কাছাকাছি আরও কয়েকজন ফটোসাংবাদিক অবস্থান নিয়েছেন। দলের নেত্রীকে ঘিরে রয়েছেন অন্তত ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতা। নেত্রী কী বক্তৃতা করছেন, সেগুলো আমার মাথায় নেই। আমার একটাই টার্গেট নেত্রীর ভালো একটা ছবি তোলা, আমি ছবি তুলছি। নেত্রী বক্তৃতা প্রায় শেষ করবেন তিনি মাইকের সামনে থেকে মুখটা শুধু ঘুরিয়েছেন, ওই সময় ট্রাকের ওপর থেকে যাওয়া ফটোসাংবাদিকেরা চিৎকার করে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আরেকবার পোজ দেওয়ার জন্য, ‘আপা, আপা…!’
এমন সময় হঠাৎ বিকট শব্দ। পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণ। চারিদিকে চিৎকার-চেঁচামেচি। নেত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কাজী জাফর উল্লাহ মানববর্ম করে ঘিরে রেখেছেন। আর দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিল্লুর রহমান দুই হাতে কান চেপে ধরে মাথা নিচু করে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। আমার ডান পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের কপাল থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আমি ছিলাম তাঁর পাশেই। সেই রক্তে আমার মুখ ও শার্ট ভিজে যায়। হঠাৎ মনে হলো কী করছি আমি! নিজেকে আগে বাঁচাতে হবে। নেতাদের তৈরি মানববর্মের নিচে মাথা লুকিয়ে ক্যামেরাটি তুলে ধরে কোন কিছু না দেখে কেবল শার্টার ক্লিক করে যাচ্ছি। মুহূর্তেই মনে হলো মাথার উপর মানববর্মের সেই পিরামিডটা আর নেই। আমি একা। উঠে দাঁড়ালাম। ট্রাক থেকে তাড়াহুড়া করে নিচে নেমে পড়লাম। নিচে নেমে যে দৃশ্য চোখে পড়লো তা ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নকেও হার মানায়। এক বিভীষিকাময় পরিবেশ। চারপাশে সারি সারি ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। দলামোচড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে। আহত নেতাকর্মীরা কাতরাচ্ছেন মৃত্যু যন্ত্রনায়। রক্তে ভেসে গেছে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। হতাদের উদ্ধার করতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছে মানুষ। নির্মম সেই ভয়াবতার ধাক্কা পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছি বলে বোধ হচ্ছিল। একটা সময় মনে হলো আরে আমার তো ছবি তুলতে হবে। দ্রুত একের পর এক ক্লিক করে যচ্ছি। সামনে পড়ে আছেন আইভি রহমান। তাঁর ছবি তুলে সামনের দিকে এগুচ্ছি আর ক্লিক করে যাচ্ছি। সামনে চোখে পড়লো আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মী। তিনি সবার মতো আমারও প্রিয় মানুষ। আমাদের ‘আদা চাচা’। দেয়ালে হেলান দিয়ে রিকশার চাকা ধরে বসে আছেন। মুহূর্তের মধ্যে চোখে চোখ পড়তেই মনে হলো, তিনি যেন কিছু একটা বলতে চাইছেন। আমি তাঁর ছবি তুলছি। সেই মুহূর্তে তাঁর চোখের ভাষাটা বুঝেও যেন বুঝতে পারিনি। কারণ আমি তো ফটো সাংবাদিক। সেই মুহূর্তে আমি ছবি তোলার নেশায় বিভোর। ছবি তোলার জন্যে হণ্যে হয়ে ছুটছি। আদা চাচার চোখের করুণ আকুতি আমাকে আটকাতে পারেনি। ছুটে আসা সাধারণ মানুষ বোমায় আহতদের বাঁচাতে তাদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটছে। চারপাশে আহতদের আর্তনাদ, নেতাকর্মীদের ছোটাছুটি, অজস্র যানবাহনের হর্ণ, কোনো কোনোটিতে জ্বলছে আগুন, বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর করছে গাড়ি সবমিলিয়ে এক বিক্ষুব্ধ পরিবেশ। এরমধ্যেই ছবি তুলতে তুলতে এক সময় জিরো পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছি। শার্ট-প্যান্ট রক্তে ভিজে আছে। রক্ত লেগেছে গায়ে। এই অবস্থা দেখে সহকর্মীরা অনেকে ভেবেছে আমিও আহত হয়েছি। তারা আমাকে যখন জিজ্ঞাসা করলো আমি আহত হয়েছি কি না তখন যেন আমার মনে হলো নিজের অবস্থা নিয়ে ভাবার। শরীরে হাত বুলিয়ে দেখে নিলাম না, শরীরে আঘাত লাগেনি। ‘আমার কিছু হয়নি’ বলে প্রেসক্লাবে চলে আসি।

ক্লাবে এসে পোশাক বদলে এক সহকর্মীর দেওয়া টি-শার্ট পরে অফিসে যাই। ছবি জমা দিয়ে বাসায় ফিরি। বাসায় ঢুকতেই বউ-বাচ্চা প্রবল আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধরে। তাদের শঙ্কা ছিল আমি হয়তো আহত হয়েছি। হাজার প্রশ্ন তাদের। ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন চ্যানেলে সংবাদ প্রচার হচ্ছিল। আমি কাপড় চোপড় না পাল্টেই খবর দেখতে বসে পড়লাম। ভাবতে লাগলাম কিভাবে সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে আমাদেরকে রক্ষা করেছেন। একটা গ্রেনেড ট্রাকের ভিতরে পড়লেই আওয়ামী লীগের সভানেত্রীসহ নেতাকর্মী এবং আমরা যে চার/পাঁচজন ফটোসাংবাদিক ট্রাকে ছিলাম সবাই মারা যেতে পারতাম। সংবাদের এক পর্যায়ে দেখলাম আমাদের সবার প্রিয় সেই আদা চাচা মারা গেছেন। এতক্ষণ নিজেকে সামলালেও সেই মুহূর্তে আর সামলাতে পারলাম না। বুক ফেটে কান্না এলো। কান্না দেখে আমার স্ত্রী রুমী সান্তনা দিতে থাকে। সে ভেবেছিল আমি ভয় পেয়েছি। নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে তাকে আদা চাচার ঘটনা বললাম। আদা চাচার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কথা বললাম। আদা চাচার সঙ্গে সব সাংবাদিকের সম্পর্ক ভালো ছিল। সাংবাদিকরাও তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। পার্টিকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতেন। কোনো জনসভা বা অনুষ্ঠান হলে কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের জন্য বাসা থেকে আদা শুকিয়ে আনতেন। খেতে দিতেন সাংবাদিকদের। আমাদের কয়েকজনকে তিনি একটু বেশি ভালোবাসতেন। তার মধ্যে আমিও একজন। স্ত্রী রুমী আমাকে সান্তনা দিয়ে টাওয়াল এনে দিয়ে বললো, গোসল করে এসো। শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল। কোন ভাবেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলাম না। বার বার মনে হচ্ছিল চাচাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। তাহলে হয়তো তিনি প্রাণে বেঁচে যেতেন।

শাওয়ারের পানিতে শরীরের রক্ত মুছে গেলেও চাচার সেই করুণ চোখের আকুতি মন থেকে মুছতে পারছি না। দরজা টোকার শব্দে শাওয়ার বন্ধ করে গা মুছে বের হয়ে খাটে গিয়ে বসলাম। ফের টিভি দেখা শুরু করলাম। কিছুই ভালো লাগছে না। রুমী খেতে ডাকছে। কিন্তু খেতেও মন চাইছে না। বারবার চাপাচাপি করেও আমাকে খাওয়াতে পারল না। ঘুমের জন্য বিছানায় গেলাম। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। কি করা উচিৎ ছিলো তখন। খালি ভাবছি। চাচাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেঁচে যেতেন। কিন্তু আমার কী ছবি তোলা হতো! তাঁর বাড়িতে সেদিনের তাঁর যে ছবিটা টাঙানো আছে সেটি আমারই তোলা। শান্তনা এতটুকুই। আদা চাচার মৃত্যুর ঘটনায় আমি আজও নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। ঘটনাটি এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। অপরাধী করে তোলে নিজের কাছেই। ১৭ বছর আগে স্বজন হারানোর বেদনা। হাত পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব জীবন। গ্রেনেডের স্পিন্টারের সঙ্গেই যাদের নিত্য বসবাস, তাদের কথা ভাবলে বিভীষিকাময় সেই ভয়াল গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে ফিরে আসা দিনটির কথা পড়। সেই ভয়াল দিনের কথা মনে হলে, আজও বুক কেপে উঠে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরোও পড়ুনঃ
© All rights reserved © 2021 | Powered By Uttoron Host
Site Customized By NewsTech.Com