সিরাজগঞ্জের চারটি উপজেলায় “জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি” শীর্ষক প্রকল্পে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যায়ে পুকুর পন:খননে বিল তৈরী করার কথা জেলা মৎস্য অফিস সহকারীর। কিন্তু বাস্তবে এই বিলের বিষয়ে কথা হয় অফিস সহকারী সিদ্দিকুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, পুকুর পুনঃখনন ও সংস্কারের বিল তৈরী সহ সকল বিষয় একাই দেকভাল করেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। এই বিষয়ে আমার কোনো কিছুই জানা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, সবই তো বোঝেন কাজ পাওয়ার জন্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে প্রাইভেট কার, আবাসিক হোটেল সহ অফিসের সবাইকে বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ করতে হয়। আর সরজমিনে গিয়ে সুফলভোগীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, পুকুর খননের বিলের বিষয়ে এই পর্যন্ত তারা কিছুই জানে না।
এবিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাহেদ আলম জানান, অফিসের সমস্ত বিল অফিস সহকারীর করার কথা এরকম অনিয়ম হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলার চার উপজেলায় “জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি” শীর্ষক প্রকল্পের চলতি অর্থ বছরে প্রায় ৩৩ হেক্টর আয়তনের ৩৯টি পুকুর খননের জন্য ৩ কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন মৎস্য অধিদপ্তর। চলতি বছরের ৩০জুন এর মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। আর চুড়ান্ত বিল প্রদান করতে হবে ৩০জুনের মধ্যে।
পুকুরগুলো হলো তাড়াশ-উপজেলার কার্তিক পুকুর পুনঃখনন ৮লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা, চতরা পুকুর পুনঃখনন ৯লক্ষ ৯৯হাজার টাকা, কুনি পুকুর পুনঃখনন ১০লক্ষ টাকা, খুলু পুকুর পুনঃখনন ৭লক্ষ ১৮হাজার টাকা, চোরধরা পুকুর পুনঃখনন ৮লক্ষ ১৫হাজার টাকা, জোয়াদ্দার পুকুর পুনঃখনন ৭লক্ষ ১৮ টাকা, বেটেমহল পুকুর পুনঃখনন ৬লক্ষ ৮৩হাজার টাকা, শিংরাগাড়ী পুকুর পুনঃখনন ৬লক্ষ ৬০হাজার টাকা, মরাদিঘি পুনঃখনন ১৬ লক্ষ ৪৩হাজার টাকা কুসুম্বি পুনঃখনন ১৯লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা, বড় আইন্দা পুনঃখনন ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা, উল্লাপাড়া-হ্যাচারী কমপ্লেক্র পুকুর (ব্রুড- ১.২.৩) ৮ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা, উল্লাপাড়া হ্যাচারী কমপ্লেক্র পুকুর (ব্রুড- ১ও পোনা পুকুর এবং লম্বা পুকুর) ৯ লক্ষ ৭ হাজার টাকা, আইন্দা পুকুর পুনঃখনন ৪ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা, আলালিয়া পুকুর পুনঃখনন ৭ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা, কাটানী দিঘী পুকুর পুনঃখনন ১৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা, নিল পুকুর পুনঃখনন ৬ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা, ফাজিলনগর কবরস্থান পুকুর পুনঃখনন ১৯ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা, বামনগ্রাম পুকুর পুনঃখনন ৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা, ভাদুরিয়া পুকুর পুনঃখনন ১০ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা, মতির পুকুর পুনঃখনন ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, রাকশাগাড়া পুকুর পুনঃখনন ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা, খোজখালী বাঘমারা পুকুর পুনঃখনন ৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা, বলাইগাড়ী পুকুর পুনঃখনন ১৫ লক্ষ ২২ হাজার সুবৈদ্য মরিচ পশ্চিম পাড়া পুকুর ১৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা, বাও নদী খাল (পশ্চিম পাশের ব্রীজ হতে ভুলু মল্লিকের বাড়ী) পুনঃখনন ১০ লক্ষ টাকা, বাও নদী খাল ( ভুলু মল্লিকের বাড়ী হতে দেলবার শেখএর বাড়ী) পুনঃখনন ৭ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা, রায়গঞ্জ-গোলদিঘী পুকুর পুনঃখনন ৮ লক্ষ ৭ হাজার টাকা, জোর পূর্ব পুকুর পুনঃখনন ১০ লক্ষ টাকা, মেছাইগাড়ী পুকুর পুনঃখনন ১০ লক্ষ টাকা, বড়মনিহার পুকুর পুনঃখনন ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা, যোগী(২) পুকুর পুনঃখনন ১৯ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা, দেলমুড়া জামে মসজিদ পুকুর খনন ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা, কোদলাদিঘর দারুল হেফজ মাদ্রাসা পুকুর -১ খনন ৩ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা, কাদলাদিঘর দারুল হেফজ মাদ্রাসা পুকুর -২ খনন ১০ লক্ষ টাকা, মাটিখোড়া বিল খনন ১০ লক্ষ টাকা, ধলজানবিল খনন ৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা, চাদপুর চালা পুকুর খনন ৬ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। সিরাজগঞ্জ-সদর, ইটালি আশ্রয়ন পুকুর পুনঃখনন ৯ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা।
ঘটনাটি তদন্তে কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জলাশয় উপকার ভোগীরা। দরিদ্র ও বেকার জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিভাগের অনিয়ম আর চরম দুর্নীতির কারণে তা শুধু কাগজে কলমেই থেকে যায়। আর ভেস্তে যায় সরকারের মহতী উদ্যোগ।
Leave a Reply