গতো দুদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে একটি বিষয় নিয়ে নিখুঁত বিচার বিশ্লেষণ চলছে। সেটি হলো রাজধানীর ভিআইপি এলাকা গুলশানের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে একটি তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে কারণ ঘটনাটির পেছনে বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সংশ্লিষ্টার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে৷ অভিযোগ টি হলো আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ। এবং এই অভিযোগে এই প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন মারা যাওয়া মুনিরার বড় বোন নুশরাত।
কে এই মুনিয়া???
মুনিয়া একজন কলেজছাত্রী।গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি বেশ কয়েকবছর আগেই মারা গিয়েছেন। তার মা বছর দুয়েক আগে মারা গিয়েছেন৷ পিতা মাতা হারানো এতিম দুই বোনের কপালে আরেকটি অভিশাপ হলো তাদের বড় ভাই৷ কারণ মুনিরার মা মারা যাবার পর তার বড় ভাই সকল জায়গা সম্পত্তি থেকে মুনিয়াদের বাস্তহারা করেছে। যার কারণে ভাই এর বিরুদ্ধে তারা মামলা করতে বাধ্য হয়েছিলো। এরপরই মুনিয়া ঢাকা তে চলে আসে। এবং সেটি নবম-দশম শ্রেণি তে পড়া অবস্থায়। এখন এই মেয়েটি কে নিয়ে অনেকে অনেকরকম কথা বলছে। মেয়েটি কেনো লোভে পড়লো? কেনো এই পথে পা বাড়ালো? কেনো মেয়ের অভিভাবক রা তাকে বাঁধা দিলোনা?
প্রশ্ন গুলো করা সহজ হলেও বাস্তবতা মুনিয়ার কাছে বেশ কঠিন ছিলো। একে সে বাস্তুহারা, বাবা মা নেই। এরকম একজন ছোটো মেয়ের কাছে পৃথিবী টা অন্ধকার বটে। এমন সময়ে তার সাথে পরিচিতি হয় ধনকুবের মালিক সায়েম সোবহানের সাথে৷ এতোটুকু একটা মেয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারবেনা এটাই তো স্বাভাবিক৷ হয়তো যখন সে বুঝতে পেরেছে তখন টার পেছনে ফেরার সুযোগ ছিলোনা৷ বাচ্চা একটা মেয়ে কে ফুসলিয়ে যারা বছরের পর বছর ভোগ করে টিস্যুর মতো ফেলে দিলো আশ্চর্যজনক ভাবে তাদের বিচার চাইছেনা অনেকে৷ একটা মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়সে তার সামনে রঙিন দুনিয়া দেখানো হলে সে ফাঁদে পা দিবেই৷ আর মুনিরার মতো বাস্তহারা মেয়ে রাণী হয়ে থাকার সপ্ন দেখলে কে এই ফাঁদে পা দিতোনা! মেয়েটি কে সায়েম সোবহানের বউ করে বিদেশে রাখার সপ্ন দেখিয়েছিলো তাকে দিনের পর দিন রক্ষিতা করে রেখেছিলো। সমাজের অন্ধ চোখ হয়তো সেটি দেখতে পারছেনা আলোর অভাবে। একটি ফুটফুটে মেয়ের সুন্দর জীবন কে তীলে তীলে নরক হয়েছে, তার আত্বচিৎকারে যখন আকাশ বাতাস ভারি হয়েছে তখন মেয়েটি কাউকে পাশে পায়নি৷ কারণ এই সমাজ তাকে বাস্তহারা থেকেও রক্ষা করতে পারেনি৷ সঠিক পরামর্শ নিয়ে মুনিরার পাশে দাঁড়াতে পারেনি। তাই শেষ পরিণতি হিসেবে ফুটফুটে মেয়েটি কে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে হয়েছে৷ মারা যাওয়ার আগে কতোরকম আশংকা, ভয়, আতংক তাকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে সহায়তা করেছে।
এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে!
গণমাধ্যম কে বলা হয় সমাজের দর্পন৷ সমাজের আলো। কিন্তু সেই গণমাধ্যম যে গণগোলামে পরিণত হয়েছে সেটি জাতি এখন বুঝে গিয়েছে৷ অভিযুক্ত ব্যক্তির নামটি মুখে আনতে তাদের ভিষণ লজ্জা লেগেছে। কেমন যেনো মুরীদ গণ পীরের নাম মুখে আনতে ভয় পাচ্ছে। নাকি রাতের আধারে টাকার বস্তার কাছে হার মেনেছে তাদের আদর্শ, মানবতা৷ অপরাধীর ছবি নাম প্রকাশ না করে সেখানে ভিকটিমের ছবি নাম কেনো প্রকাশ করা হলো? ভিকটিমের ছবি নিয়ে কেনো এতো মাতামাতি? তাদের দেখানো পথে আমাদের শিক্ষিত সমাজের অনেকেই সে পথে পা বাড়ালো? ভিকটিম কে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ দেওয়া হলো?
মিডিয়া ট্রায়াল!
আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ একেক জন বিশ্লেষক। তারা নিখুঁত বিচার বিশ্লেষন করে কেউ মেয়ে কেই দোষারোপ করছে আবার কেউ সায়েম সোবহান কে দোষারোপ করছে। অথচ প্রকৃত অপরাধী কে এখনো প্রকাশ পায়নি৷ সেখানে কাউকে অপরাধী বলার সুযোগ নেই৷ তবে যেহেতু মামলা হয়েছে,সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচার হোক এটিই জাতির প্রত্যাশা। এবং এটাও প্রত্যাশা যেনো মুনিয়ার মতো পরিণতি অন্য কারো না হয়৷ কেউ যেনো ধনীর অবৈধ টাকায় ভোগ বিলাসীর পাত্র হয়ে জীবনের নির্মম পরিহাসের শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে৷
পরিশেষে বলতে চাই মুনিয়া যেনো ন্যায় বিচার পায় সেদিকে দৃষ্টি রাখবেন৷
Leave a Reply