বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, শয্যা সংকট আর মানহীন কোম্পানীর ঔষধ প্রতিনিধির দৌরাত্মে ব্যাহত হচ্ছে পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালে কাগজ কলমে ১০ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কথা থাকলেও প্রত্যেকটি পদই রয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শূণ্য। পদগুলো হল মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী, অ্যানেসথেসিয়া, মা ও শিশু, অর্থপেডিক্স, চক্ষু, নাক কান গলা ও চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।
হাসপাতালের বর্হি:বিভাগে প্রতিদিন মা শিশু, চোখ, চর্ম ও ভাঙ্গাচোড়া নানান রোগী আসলেও ভাল সেবা না পেয়ে তাদের ছুটতে হয় প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাড়ি জমিয়ে বিভাগীয় বরিশাল শহরে। ফলে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষদের। এছাড়াও হাসপাতালে জ্বর, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ নিয়ে রোগী ভর্তি হলেও পাচ্ছেন না বেড।
নাম না প্রকাশ শর্তে হাসপাতালের এক ডাক্তার অভিযোগ করে জানান, এখানকার হাসপাতালের সমস্যার অন্ত নেই। শয্যা সংকট আর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এখানকার একটি অতি পুরানো সমস্যা। এ নিয়ে রোগীরা নানান সমস্যায় পড়ে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে হাসপাতালে যেসব ডাক্তার আছেন তাদের অনেকেই স্বাধীনভাবে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ভাল কোন কোম্পানীর ঔষধও লিখতে পারছেন না। স্থানীয় কিছু লোক মানহীন কোম্পানীর প্রতিনিধিত্ব করে প্রভাব খাটিয়ে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে তাদের কোম্পানীর ঔষধ লেখাতে বাধ্য করছেন। এটাও একটা বড় সমস্যা বলে তিনি মনে করেন। তাদের কথার বাইরে কেউ চলতে গিয়ে কত কয়েক বছরে স্বেচ্ছায় অন্যত্র বদলি নিয়ে ছেড়েছেন হাসপাতাল।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহি:র্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী এবং জরুরি বিভাগে ৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। আন্ত:বিভাগে ৫০টি শয্যা থাকলেও অধিকাংশ সময়েই ১০০ বা তারও বেশী রোগী ভর্তি থাকেন । এ কারণে বেশিরভাগ সময়ই ভর্তি রোগীদের অনেককেই মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হয়।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ কিবরিয়া জানান, নেছারাবাদ প্রধান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনটি ছিল ৩১ শয্যা বিশিষ্ট। পরে ভবনটি অতি পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ন হয়ে ওঠায় পাশেই ১৯ বেডের একটি নতুন ভবন তৈরী হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই ৩১ শয্যার পুরাতন ভবন বর্তমানে পরিত্যক্ত যা ইতিমধ্যে পিরোজপুর এক আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মহোদয় এডভোকেট শ. ম রেজাউল করিম সাহেবের চেষ্টায় নিলামের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিত্যক্ত ভবনটি অপসারণের কাজ চলছে। পুরাতন ঝুঁকিপূর্ন ভবনটি ভেঙ্গে ফেলায় এখন ৫০ শয্যার হাসপাতালের সকল কার্যক্রম নতুন ১৯ শয্যার বর্ধিত ভবনেই চালাতে হচ্ছে। এজন্য হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারী এবং রোগীদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
ডা. ফিরোজ কিবরিয়া আরো জানান, মন্ত্রী মহোদয়ের আন্তরিকতায় ইতোমধ্যে হাসপাতালের অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়েছে। যার সুফল রোগীরা পাচ্ছেন। তবে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শূণ্য পদগুলো পূরণ এবং ১৯ বেডের ভবনটি ১০০শয্যায় উন্নীত হলে এখান থেকে অনেক সেবা মিলবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Leave a Reply